সুবর্ণচর প্রতিনিধি-
নোয়াখালীর খবর-
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে পরকীয়ার ঘটনা ধামাচাপা দিতে এক নারী মিথ্যা ধর্ষণচেষ্টার মামলা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর সেই মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে ভুয়া তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন এক সরকারি কর্মকর্তা -এমন অভিযোগ করেছেন মামলারই সাক্ষীরা।
অভিযুক্ত তদন্ত কর্মকর্তা হলেন নোয়াখালী জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক কামরুন নাহার। তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে সুবর্ণচরের চর মজিদ গ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে মামলার সাক্ষী হোসনেয়ারা বেগম, আবদুল কাইয়ুম ও খতিজা খাতুন এই অভিযোগ তুলে ধরেন। তারা দাবি করেন, মিথ্যা মামলা ও বানোয়াট প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিরীহ ব্যক্তিদের জেলে পাঠানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাক্ষীরা জানান, মামলার বাদী শারমিন আক্তার তার পরকীয়ার ঘটনা আড়াল করতে এই মিথ্যা মামলা সাজিয়েছেন। তাদের ভাষ্যমতে, গত ১৬ জুন রাতে শারমিনকে তার নিজ ঘরে জামাল উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে প্রতিবেশীরা। পরে পারিবারিক সম্মান ও শারমিনের দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। কিন্তু ঘটনার প্রায় তিন মাস পর শারমিনের প্রবাসী স্বামী রাসেল দেশে ফিরলে তিনি প্রতিবেশী মাকছুদ উদ্দিন, নবী ও মাহফুজুল হকের বিরুদ্ধে আদালতে ধর্ষণচেষ্টার মামলা করেন।
মামলার ১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে যার নাম দেওয়া হয়েছে, সেই হোসনেয়ারা বেগম ৩ নম্বর আসামি মাহফুজুল হকের স্ত্রী। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমাকে না জানিয়েই ভুয়া মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে, আর আমার স্বামীকেই করা হয়েছে আসামি। আদালতে আমার নামে যে জবানবন্দি দেওয়া হয়েছে, তা পুরোপুরি বানোয়াট। আমি এ বিষয়ে কোনো নোটিশ পাইনি এবং কোথাও জবানবন্দি দেইনি।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “তদন্ত কর্মকর্তা কামরুন নাহার আমাদের সঙ্গে কোনো কথা না বলেই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আমার নামে ভুয়া জবানবন্দি ও স্বাক্ষর দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই পুলিশ নিরপরাধ নবী ও আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা ও সমাজকর্মী কামাল মিয়াও ১৬ জুনের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “শারমিনকে জামাল নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে অসামাজিক কাজে লিপ্ত অবস্থায় আটক করা হয়েছিল। তার ভাইয়ের অনুরোধে বিষয়টি তখন মীমাংসা করা হয়। কিন্তু এখন উল্টো প্রতিবেশীদের ফাঁসানো হচ্ছে।”
মামলার এজাহার অনুযায়ী, গত ১ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করা হয়। এতে বলা হয়, ২৭ আগস্ট রাতে বাদীর ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা কামরুন নাহার গত ২৫ অক্টোবর আদালতে দুজন সাক্ষীর জবানবন্দি দাখিল করেন। সেখানে ১ নম্বর সাক্ষী হোসনেয়ারা বেগমের জবানবন্দিতে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর উল্লেখ নেই এবং তার স্বাক্ষরটি কাবিননামার স্বাক্ষরের সঙ্গে অমিল রয়েছে বলে দাবি করা হয়।
আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, প্রতিবেদনে ২ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির জবানবন্দি সংযুক্ত করা হয়েছে, যিনি বাদীর প্রতিবেশী বলে উল্লেখ করা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, জামাল উদ্দিনের বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, গত ১৬ জুন রাতে শারমিনের সঙ্গে যে ব্যক্তিকে পরকীয়ায় লিপ্ত অবস্থায় আটক করা হয়েছিল, এই জামাল উদ্দিনই সেই ব্যক্তি। মুঠোফোনে জামাল উদ্দিনের স্ত্রীও স্বামীর পরকীয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
ঘুষের বিনিময়ে মিথ্যা প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা কামরুন নাহার তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “এখানে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি। আমি যা সঠিক মনে করেছি, তাই প্রতিবেদনে দিয়েছি।”
সাক্ষী হোসনেয়ারার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। জামাল উদ্দিনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “বিষয়টি আমার মনে পড়ছে না। প্রতিদিন অনেক মামলা আসে, সব মনে রাখা সম্ভব নয়। এসব বিষয় আমার সহকারীরা যাচাই করেন, যিনি এই বিষয়টি দেখেছেন তিনি এখন ছুটিতে আছেন।”

