বন্ধুত্বের নজির: নোয়াখালীতে বন্ধু না আসা পর্যন্ত বিয়েতে ‘কবুল’ বললেন না বর!
নোয়াখালীতে ঘটেছে এক বিরল ও হৃদয়ছোঁয়া ঘটনা। বন্ধুর প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের টানে নিজের বিয়ের ‘কবুল’ বলাও থামিয়ে রেখেছিলেন এক বর!
ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার তমরদ্দি ইউনিয়নের ক্ষিরোদিয়া গ্রামে। বরের নাম আরমান হোসেন, তিনি হাতিয়ার সোনাদিয়া ইউনিয়নের মাইজচরা গ্রামের করিম বেপারির ছেলে।
বিজ্ঞাপন
সেদিন দুপুরে কনের বাড়িতে বরযাত্রী পৌঁছায় ঠিকই, কিন্তু শুরু হয় এক অদ্ভুত নাটকীয়তা। জানা যায়, বর আরমান তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রিয়াজকে না দেখে গাড়ি থেকে নামতে অস্বীকৃতি জানান। পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও অতিথিদের শত অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি একটাই কথা বলেন— “রিয়াজ না এলে আমি কবুল বলব না!”
এর আগে বিয়ের দিন সকালে গাড়িতে বসা নিয়ে ছোট্ট একটি বিষয় নিয়ে রিয়াজের সঙ্গে আরমানের মনোমালিন্য হয়। অভিমানে রিয়াজ বিয়েতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বন্ধুর অনুপস্থিতিতে আরমানের বিয়ের সব আয়োজন থমকে যায়।
দুই ঘণ্টা ধরে চলতে থাকা এই অবস্থার অবসান ঘটে যখন বরপক্ষের লোকজন রিয়াজকে রাজি করিয়ে বিয়েবাড়িতে নিয়ে আসেন। বন্ধুকে দেখে হাসিমুখে মঞ্চে বসেন বর আরমান এবং তখনই সম্পন্ন হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।
আমন্ত্রিত অতিথি আব্দুল মান্নান রানা বলেন,
“জীবনে এমন ঘটনা দেখিনি। বন্ধুর জন্য কেউ বিয়ে থামিয়ে রাখবে— এটা ভাবতেও পারিনি! কিন্তু আজ বুঝলাম, সত্যিকারের বন্ধুত্ব কেমন হয়।”
তবে কনেপক্ষের জন্য ঘটনাটি ছিল কিছুটা বিড়ম্বনাকর। কনের আত্মীয় আলতাফ হোসেন জানান,
“দুপুর ১২টা থেকে খাবার পরিবেশন শুরু হয়। বর আসে দেড়টার দিকে, কিন্তু তার বন্ধুর জন্য দুই ঘণ্টা বিয়ে আটকে ছিল। অনেক অতিথি বিরক্ত হয়ে চলে যান।”
কনের মামা সেলিম হোসেন বলেন,
“সব কিছু প্রস্তুত, কাজী বসে আছেন, সবাই অপেক্ষায়— অথচ বর কবুল বলছে না! পরে শুনলাম, বন্ধুর জন্য বিয়ে আটকে আছে!”
ঘটনার বিষয়ে বর আরমান হোসেন বলেন,
“রিয়াজ আমার শৈশবের বন্ধু। জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিনে তাকে ছাড়া বিয়ে সম্পন্ন করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই ও আসার পরই আমি কবুল বলেছি।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটির ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। নেটিজেনরা বলছেন, আজকের যুগে এমন বন্ধুত্ব সত্যিই বিরল এবং অনুপ্রেরণাদায়ক।


