সুবর্ণচরের প্রবেশপথে ‘মহিষের ভাস্কর্য’: ইতিহাস না অপমান?
নোয়াখালী সদর থেকে পৃথক হয়ে ২০০৫ সালে সৃষ্ট হয় সুবর্ণচর উপজেলা। বিএনপি সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত এ উপজেলার প্রশাসনিক কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ২০০৬ সালে। নতুন উপজেলার স্বীকৃতির অংশ হিসেবে সদর উপজেলার শেষ প্রান্ত—সোনাপুর-চরজব্বার সড়কে সুবর্ণচরের প্রবেশপথে একটি মহিষের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই ভাস্কর্য এখন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। কেন একটি সম্ভাবনাময়, সমৃদ্ধশালী উপকূলীয় উপজেলায় প্রবেশপথের প্রতীক হিসেবে একটি মহিষ বেছে নেওয়া হলো—তা নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, মহিষ মূলত উত্তর গোলার্ধের প্রাণী, যা ভারত উপমহাদেশ, বলকান, এশিয়া মাইনর এবং মিশরে গৃহপালিত পশু হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে সুবর্ণচর উপজেলা বাংলাদেশের অন্যতম উর্বর ভূমি, যেখানে রয়েছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সুশোভিত বৃক্ষরাজি, বনভূমি, রুপালি চরের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এবং বিপুল মৎস্যসম্পদ।
এই বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠেছে—উপজেলার প্রবেশপথে একটি দৃষ্টিনন্দন গেইট বা স্থাপত্যের পরিবর্তে মহিষের ভাস্কর্য স্থাপন কীভাবে সুবর্ণচরবাসীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মর্যাদার প্রতিনিধিত্ব করে?
চট্টগ্রাম নগরের প্রবেশপথে রয়েছে কারুকার্যমণ্ডিত ‘সিটিগেইট’, নোয়াখালী পৌরসভার প্রবেশে ‘নোয়াখালী গেইট’। এমন উদাহরণ দেশে অসংখ্য। সেখানে সুবর্ণচরের মতো একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চলের প্রবেশপথে একটি গেটের পরিবর্তে মহিষের ভাস্কর্য—এটি শুধু দৃষ্টিনন্দনতার অভাব নয়, বরং এক ধরনের ‘ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক অপমান’ বলেই মনে করছেন অনেকেই।
চরজুবিলীর বাসিন্দা মোহাম্মদ সহিদ উল্লাহ (বাচ্চু) বলেন, “আমাদের উপজেলায় রয়েছে নদী, সমুদ্র, বন, কৃষি আর ঐতিহ্যের অপার সম্ভার। এই এলাকার প্রবেশপথে একটি চমৎকার গেইট হতে পারত, যা আমাদের ইতিহাস ও গর্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়াত। কিন্তু সেখানে মহিষের ভাস্কর্য দেখে আমরা বিস্মিত ও ব্যথিত।”
স্থানীয়দের দাবি, সোনাপুর-চরজব্বার সড়কে সুবর্ণচর উপজেলার প্রবেশপথে একটি আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন গেইট নির্মাণ করা হোক। যা কেবল একটি প্রবেশপথ নয়, বরং সুবর্ণচরের গৌরব, সম্ভাবনা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে কাজ করবে।