কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি | নোয়াখালীর খবর-
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় মুজিব বর্ষে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো বর্তমানে মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে—এমন চিত্রই উঠে এসেছে বিভিন্ন প্রকল্প এলাকায় সরেজমিন তদন্তে। বরাদ্দ পাওয়া ৭৫১টি দম্পতির অধিকাংশই ঘরে থাকছেন না; বরং এসব ঘরে ভাড়া থাকছে বহিরাগত, জবরদখলকারী এবং অপরাধীচক্রের সদস্যরা।
বরাদ্দ পেয়েও থাকছেন না অনেকে
তথ্য মতে, পূর্ববর্তী সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সুপারিশে বহু স্বচ্ছল ব্যক্তি, প্রবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের ঘনিষ্ঠজনেরা আশ্রয়ণের ঘর পেয়েছেন। বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও অনেকে নিজেরা না থেকে ঘর ভাড়া দিয়েছেন, আবার কেউ একাধিক ঘর দখল করে রেখেছেন।
৫ আগস্টের পর জবরদখলের মহোৎসব
সরকার পরিবর্তনের পর পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়। আওয়ামী লীগ–সমর্থিত অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিরা পলায়ন করলে তাদের প্রতিপক্ষরা ঘরে ঘরে জবরদখল শুরু করে। কেউ দলীয় লোকজনকে দখল করতে দেন, আবার কেউ ঘর দখল করিয়ে টাকা নেন। বহু ঘরে চলছে মাদক ব্যবসা ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড।
চরএলাহী—সন্ত্রাসীদের প্রধান ঘাঁটি
চরএলাহী বাজার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৪টি ঘর এখন সন্ত্রাসীচক্রের নিয়ন্ত্রণে। স্থানীয়দের অভিযোগ—সুরুজ মিয়ার ছেলে রিপন এবং বারেকের নেতৃত্বে সেখানে চলছে মাদক বিক্রি, অসামাজিক কার্যকলাপ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন।
এলাকার ৩৭ নম্বর বরাদ্দ ঘরটি মোঃ বেলালের নামে হলেও সেটি বর্তমানে দখলে রেখেছে ইব্রাহিম তোতা ও তার ভাই। একইভাবে ৩৬ নম্বর ঘর বরাদ্দ পাওয়া নুরনবী–কুলসুম দম্পতিকে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে ঘর ছাড়তে বাধ্য করার অভিযোগও মিলেছে।
প্রশাসনের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন
এলাকাবাসীর অভিযোগ—উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের রহস্যজনক নীরবতার কারণেই এসব অনিয়ম বহুদিন ধরে চলে আসছে। চরএলাহী ইউনিয়নের বাজারসংলগ্ন আশ্রয়ণের সব ঘরই বর্তমানে ইব্রাহিম তোতা গংদের নিয়ন্ত্রণে। তারা ঘর দখল করে আশ্রিত পরিবারকে তাড়িয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অন্যান্য ইউনিয়নেও একই পরিস্থিতি
জানতে পারে—
সিরাজপুর ইউনিয়ন: গহিরার দিঘীর ২২টি ঘরের অনেকগুলো ভাড়া দেওয়া, অনেক ঘরে বহিরাগতদের আড্ডা, মাদকসেবন।
মৌলভীবাজার আশ্রয়ণ প্রকল্প: ৬৩টি ঘরের অনেকগুলো ভাড়া দেওয়া বা নগদ টাকায় বিক্রির অভিযোগ।
চরহাজারী: ২৮টি ঘরের মধ্যে অধিকাংশ ঘর তালাবদ্ধ বা প্রভাবশালীদের দখলে।
চরফকিরা: সাইক্লোন শেল্টার ও বেড়িবাঁধের ৫৬টি ঘরেই দখল–জবরদখল ও ভাড়া দেওয়ার প্রমাণ।
মুছাপুর ইউনিয়ন: ১৩৩টি ঘরে বরাদ্দপ্রাপ্তদের অনুপস্থিতি ও অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ।
চরকলমী: ৩৯৩টি বরাদ্দ ঘরের বড় অংশ তালাবদ্ধ, ভাড়াটেদের দখলে বা প্রভাবশালী চক্রের নিয়ন্ত্রণে।
উপকারভোগীরা বলছেন
চরকলমী প্রকল্পের ঘর পাওয়া ফকির আহাম্মদ জানান, তিনি মাঝে মাঝে ঘরে থাকেন; বর্তমানে তিনি আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছেন।
প্রশাসনের অবস্থান
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন,
চরএলাহী প্রকল্পে জবরদখলের অভিযোগ তদন্তে তহসিলদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা জুড়ে তদন্ত করে বরাদ্দপ্রাপ্তরা অনুপস্থিত বা ঘর অবৈধভাবে হস্তান্তরের প্রমাণ মিললে বরাদ্দ বাতিল করা হবে। মাদক ব্যবসা বা অসামাজিক কার্যকলাপের প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপসংহার
আশ্রয়ণ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল ভূমিহীন–গৃহহীন মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরি করা। কিন্তু কোম্পানীগঞ্জে তা পরিণত হয়েছে মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে। দ্রুত তদন্ত ও কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ ছাড়া এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সম্পাদক হিমেল আহাম্মেদ কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত