শাহাদাত হোসেন
নোয়াখালী খবর ডিজিটাল ডেস্ক:
নোয়াখালী জেলার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–র যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির সদ্য ঘোষিত ৪১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কমিটি ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যেই এর ৩০ জন সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকালে সম্মিলিত পদত্যাগপত্র জমা পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় যুবশক্তির মুখ্য সংগঠক ইঞ্জিনিয়ার ফরহাদ সোহেল। তিনি জানান, ৩০ জন সদস্যের স্বাক্ষরিত একত্রিত পদত্যাগপত্র তিনি পেয়েছেন।
সম্মিলিত পদত্যাগপত্রে তারা উল্লেখ করেন, কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় যথাযথ স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার প্রতিফলন ঘটেনি। ত্যাগী, পরিশ্রমী ও মাঠের পরীক্ষিত নেতৃত্ব মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক অবদান যথাযথভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি এবং বর্তমান কাঠামোর আওতায় জেলার সংগঠনকে শক্তিশালী করা আমাদের পক্ষে কার্যকরভাবে সম্ভব নয়।
তারা আরও উল্লেখ করেন, দলের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ, নৈতিকতা এবং নোয়াখালীর সংগঠনের প্রতি আন্তরিকতার জায়গা থেকে আমরা সম্মিলিতভাবে নোয়াখালী জেলা কমিটির সব পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আমাদের এই সম্মিলিত পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে নোয়াখালী জেলা কমিটি থেকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
পদত্যাগকারীরা হলেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াছিন আরাফাত, যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিব উল্লাহ (জুলাই আহত যোদ্ধা), মো. শাহরিয়ার খান, মনি আক্তার, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব জহির আহমেদ আবির, যুগ্ম সদস্য সচিব তামিম উদ্দিন (শহীদ পরিবার), মেহেদি হাসান অপু, রেহান উদ্দিন অঞ্জন, মোহাম্মদ সজিব, নাহিদা সুলতানা, মোহাম্মদ হোসাইনুল সিয়াম, রাহাত আরাফাত সাব্বির, মোহাম্মদ শাকিল উদ্দিন (জুলাই আহত যোদ্ধা), সিনিয়র সংগঠক আবুল ফারাহ রাজু, সংগঠক সাইফুল ইসলাম তুহিন, জুয়েল উদ্দিন হেলাল, শাহাদাত হোসেন শিপন, আবদুল্লাহ আল নোমান, তাওফিক বিন কাশেমি, মো. জমির উদ্দিন, মোহাম্মদ উল্লাহ, জিল্লুর রহমান, রিতা বিনতে আলমগীর, মোহাম্মদ মোজাহিদ, আশিকুর রহমান, ইয়াছিন আরাফাত তুষার, আবরাম হোসেন, মাজহারুল ইসলাম ফাহাদ, মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া ও আদনান হাবিব করিম।
এ বিষয়ে একাধিক পদত্যাগকারী জানান, সংগঠনের প্রতি অনুগত থাকলেও ন্যায়সঙ্গত মূল্যায়নহীন এই কমিটিতে থাকা তাদের রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাদের অভিযোগ, তৃণমূলের নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন না করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের লবিংয়ের ভিত্তিতে কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, ফলে প্রকৃত ত্যাগী ও মাঠের পরীক্ষিত নেতারা উপেক্ষিত হয়েছেন।
কমিটি ঘোষণার পর প্রথমেই পদত্যাগ করা সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াছিন আরাফাত গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলাম আজ আমরাই বৈষম্যের শিকার হলাম। কেন্দ্রীয় নেতারা পছন্দের মানুষ দিয়ে কমিটি করেছে তাই পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। ৪১ সদস্যের কমিটি থেকে ৩০ জন পদত্যাগ করেছে। এটা আমাদের প্রতিবাদ।
জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির মুখ্য সংগঠক ইঞ্জিনিয়ার ফরহাদ সোহেল গণমাধ্যমকে আরও বলেন, আমরা ৩০ জনের সম্মিলিত পদত্যাগ পত্র পেয়েছি। এর আগেই আমরা বিষয়টি জেনেছি। আমাদের দলীয় ফোরামে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পদত্যাগকারীরা অভিযোগ করেছেন, কমিটি গঠনের সময় তাদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে পদ বণ্টন হয়নি। এতে তারা সংগঠনের কার্যক্রমে নিজেকে অসহায় মনে করছেন বলে পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেছেন।
ইঞ্জিনিয়ার ফরহাদ সোহেল বলেন, “বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আলোচনা করে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এদিকে ধারাবাহিক পদত্যাগে জেলা পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে আশা করছেন, কেন্দ্রীয় কমিটি দ্রুত সমাধান বের করবে এবং সাংগঠনিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে।

