বউয়ের গহনা বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করছেন নোয়াখালীর মজনু আহমেদ
স্টাফ রিপোর্টার:
নোয়াখালীর খবর-
ঢাকার পল্টন এলাকার পরিচিত ট্রাভেল এজেন্সি “নুর আরসোয়ালা”র মালিক নোয়াখালীর মজনু আহমেদের জীবনে সম্প্রতি ঘটে গেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। তাবলীগ জামাতে ১২০ দিনের জন্য বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগে তাঁর ব্যবসার অংশীদাররাই কোটি টাকার প্রতারণা করে উধাও হয়ে গেছেন।
ব্যবসায়ী মজনু আহমেদ জানান, ২০২৪ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে তাঁর পরিচয় হয় চট্টগ্রামের আশরাফুল হক রানা (৩৫) ও মনিরুজ্জামান (৪২) নামে দুই ব্যক্তির সঙ্গে। সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতায় তাঁদেরকে তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানের অংশীদার করেন। কিন্তু অভিযোগ অনুযায়ী, নুর তাবলিগে যাওয়ার আগে ব্যবসার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার সুযোগে ওই দু’জন ক্রোয়েশিয়া ও সার্বিয়া ভিসা প্রসেসিংয়ের নাম করে মোট ৪৫ জন গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৬৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যান।
তাবলিগফেরত মজনু অফিসে ফিরে দেখেন—গ্রাহকদের অভিযোগ, বিল ও কাগজপত্রে গরমিল এবং অংশীদারদের অনুপস্থিতি। পরে যোগাযোগ করলে আশরাফুল ও মনিরুজ্জামান আংশিক টাকা পরিশোধ করলেও এখনো প্রায় ৪৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা বাকি রয়েছে। টাকা চাইলে তাঁরা ফোন বন্ধ রাখেন, বাড়িতেও পাওয়া যায় না।
অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও আইনি নোটিশ দেওয়া হলেও অভিযুক্তরা দাবি করছে, তারা ব্যবসার কোনো অংশীদারই ছিল না।
তবুও মজনু হাল ছাড়েননি। তিনি বলেন,
“আমি নিঃস্ব নই—আমি দায়িত্ববান। গ্রাহকের এক টাকাও আমার কাছে বাকি থাকবে না। এখন পর্যন্ত স্ত্রীর গহনা ও ব্যক্তিগত সম্পদ বিক্রি করে এবং ধারদেনা করে ২১ লাখ টাকার বেশি পরিশোধ করেছি। ইনশাআল্লাহ ব্যবসার আয় থেকে বাকি টাকাও ফেরত দেব।”
প্রতিষ্ঠানের অন্য অংশীদার আতায়ে রাব্বি বলেন,
“মনিরুজ্জামান ও আশরাফুল আমাদের স্বপ্ন ভেঙেছে। আমরা চাই তাদের দ্রুত বিচার হোক।”
সিলেটের অংশীদার রায়হান আহমেদ পাবেল যোগ করেন,
“ওরা শুধু একজন মানুষকে নয়, পুরো প্রতিষ্ঠানের সুনামকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আইনি ব্যবস্থা হওয়া জরুরি।”
ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন—বিল্লাল হোসেন অনিক, আলাউদ্দিন রকি, সাখাওয়াত হোসেন, অপু রায়হান, আপরোজা মায়া, আবিদা সুলতানা, চৌধুরী আল নাহিয়ান, পারভেজ মিয়া, আব্দুর রাকিব, রাশেদসহ অনেকে।
তাঁরা জানান, “আমরা নুর ভাইয়ের প্রতিষ্ঠানে বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছিলাম। এখন উনি ব্যক্তিগত সম্পদ বিক্রি করে আমাদের টাকা ফেরত দিচ্ছেন। আমরা চাই প্রতারকদের দ্রুত শাস্তি হোক।”
অভিযোগ অনুযায়ী, আশরাফুল হক রানার বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার রাঙুনিয়া থানার দক্ষিণ খিলমোগল গ্রামে, আরব তালুকদার বাড়ি। তবে তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
মজনু আহমেদ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন,
“আশরাফুল হক একটি প্রতারণা চক্রের সদস্য, যারা সারা দেশে এভাবে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে টার্গেট করছে।”
উল্লেখ্য, মামলা ও তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান থাকায় এই প্রতিবেদনটি ভুক্তভোগী, গ্রাহকের কাগজপত্র এবং উন্মুক্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। আইনি প্রমাণ ও তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নির্ধারিত হবে বলে জানানো হয়েছে।

সম্পাদক হিমেল আহাম্মেদ কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত