কবির হাট উপজেলা প্রতিনিধি-
নোয়াখালীর খবর-
একাধিক সংস্থার তদন্তে ‘দুর্ঘটনা’ বললেও নিহতের পরিবার মানতে নারাজ, অভিযুক্ত দুই বন্ধুর দাবি তারা নির্দোষ।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ২০১৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন রাকিব নামে এক যুবক। তবে দীর্ঘ ৯ বছর পার হলেও রাকিবের মৃত্যু নিয়ে এখনো রহস্য কাটেনি।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সেদিন রাতে তিন বন্ধু—রাকিব, সাকিব ও পিয়াস ব্যাডমিন্টন খেলে ফেরার পথে চরকাকড়া ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান হাজী সফিউল্লাহর বাড়ির দরজার সামনে তাদের বাইক দুর্ঘটনার শিকার হয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে গুরুতর আহত রাকিবকে নোয়াখালী জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাকিব মারা যান।
বিজ্ঞাপন
তদন্তে তদন্ত, তবু পরিবারের দাবি হত্যা
ঘটনার পর কোম্পানীগঞ্জ থানা প্রাথমিক তদন্তে এটিকে ‘বাইক দুর্ঘটনা’ বলে উল্লেখ করে। পরবর্তীতে নিহত রাকিবের পরিবার মামলা করলে, থানার এসআই সৈকতও তদন্ত করে একই প্রতিবেদন দেন।
এরপর মামলাটি পর্যায়ক্রমে ডিবি, পিআইবি ও সিআইডিতে যায়। প্রতিবারই তদন্ত সংস্থাগুলো জানায়, “এটি হত্যা নয়, বরং দুর্ঘটনা।” এমনকি পিআইবি কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে নতুন ময়নাতদন্ত করেও একই সিদ্ধান্তে পৌঁছায়।
তবে রাকিবের পরিবার কোনোভাবেই মানতে নারাজ। তাদের অভিযোগ—রাকিবকে তার দুই বন্ধু সাকিব ও পিয়াস পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। বর্তমানে মামলাটি সিআইডির তদন্তাধীন রয়েছে।
রাজনৈতিক বিরোধের অভিযোগ
এ ঘটনায় নতুন মোড় নেয় ২০২৫ সালের সরকার পতনের পর। অভিযোগ উঠেছে, নিহত রাকিবের ভাই ও বর্তমান যুবদল নেতা তারেক, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে ছাত্রলীগ কর্মী সাকিব ও পিয়াসের পরিবারকে নানা হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার করছেন।
সাকিবের দাবি
অভিযুক্ত সাকিব গণমাধ্যমকে বলেন,
“আমি ওমরাহ পালন করতে গিয়ে পবিত্র কাবাঘরে দাঁড়িয়ে কসম করেছি—আমার বন্ধু রাকিব সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আমি আর পিয়াসও আহত হয়েছিলাম। যদি আদালত প্রমাণ করে আমি খুন করেছি, দেশের প্রচলিত আইনে যে শাস্তি হয় আমি মেনে নেব। কিন্তু আমার পরিবারকে কেন বারবার হয়রানি করা হচ্ছে?”
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি সৌদি আরবের একটি মসজিদে ফজরের নামাজ শেষে কোরআন মাথায় নিয়ে শপথ করেছেন, রাকিব কোনো হত্যার শিকার হননি, বরং বাইক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
উপসংহার
৯ বছরেও রাকিব মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হয়নি। একদিকে পরিবারের দাবি পরিকল্পিত হত্যা, অন্যদিকে একের পর এক তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনে এটি কেবল দুর্ঘটনা। শেষ পর্যন্ত আদালত কী সিদ্ধান্ত দেয়—সেটিই এখন দেখার বিষয়।