আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার আরেক নাম বাংলাদেশ: প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল
বাংলাদেশে প্রতিদিনের জীবন যেন ঝুঁকির আরেক নাম। সড়ক, রেলপথ, জলপথ কিংবা খোলা মাঠ—প্রায় সব জায়গাতেই মৃত্যুর ঝুঁকি লুকিয়ে আছে। ২০২৪ সালে শুধু সড়ক দুর্ঘটনাতেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮,৫৪৩ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে মারা গেছেন প্রায় ২৩ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে, বাংলাদেশে প্রতি এক লাখে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ১৮.৬–১৯ জন, যা দক্ষিণ এশিয়ার গড়ের চেয়ে বেশি।
বিজ্ঞাপন
সড়ক দুর্ঘটনা: নিয়ম–আইন উপেক্ষাই প্রধান কারণ
শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সড়কগুলোতে গতি নিয়ন্ত্রণহীন, চালকের অসচেতনতা, হেলমেট–সিটবেল্ট ব্যবহার না করা এবং ট্রাফিক আইন উপেক্ষার কারণে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, শাস্তির অভাব এবং আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতাও এই সংকট বাড়িয়ে তুলছে।
খুন কম, ভয় বেশি
বাংলাদেশে হত্যার হার তুলনামূলকভাবে কম—প্রতি এক লাখে গড়ে প্রায় ২ জন। তবে মিডিয়ায় খুনের খবর বড় আকারে প্রচারিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি তীব্র থাকে।
বিজ্ঞাপন
বজ্রপাত: নীরব ঘাতক
বাংলাদেশে বজ্রপাতে বছরে মারা যান গড়ে ৩০০ জন। শুধু ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্তই প্রাণ গেছে ২৯৭ জনের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক কারণে বজ্রপাত হলেও মানুষের অসচেতনতা, নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব এবং জরুরি সতর্কতা ব্যবস্থার ঘাটতি মৃত্যুহার বাড়াচ্ছে।
অগ্নিকাণ্ড: আগুনে পুড়ে অগণিত ক্ষতি
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে ২৬,৬৫৯টি অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪০–১৪২ জন, আহত হয়েছেন প্রায় ৩৭৮ জন। বৈদ্যুতিক ত্রুটি, গ্যাস চুলার অসতর্ক ব্যবহার, সিগারেট এবং অগ্নি নিরাপত্তার অবহেলা—সবই অগ্নিকাণ্ডের বড় কারণ।
রেল ও জলপথ: নিরাপত্তাহীন যাতায়াত
২০২৪ সালে রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫১২ জন এবং জলপথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৮২ জন। অতিরিক্ত যাত্রী, নকশাগত ত্রুটি, আবহাওয়া এবং নিরাপত্তা বিধি উপেক্ষার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে।
বিজ্ঞাপন
প্রবাসে যাওয়ার প্রবণতা
দেশে নিরাপত্তাহীনতা, দুর্ঘটনা এবং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন ৭৪ লাখের বেশি বাংলাদেশি। শুধু ২০২৪ সালেই দেশ ছেড়েছেন প্রায় ৪.৫ লাখ মানুষ।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সড়ক নিরাপত্তা, অগ্নি নিরাপত্তা, সামাজিক সচেতনতা এবং শিক্ষার মান বাড়ানো ছাড়া এই মৃত্যুমিছিল থামানো সম্ভব নয়।
তাদের মতে, হেলমেট–সিটবেল্ট ব্যবহার, লাইফ জ্যাকেট, ব্ল্যাক–স্পট ইঞ্জিনিয়ারিং, বৈদ্যুতিক ও গ্যাস–নিরাপত্তা এবং জরুরি মোবাইল অ্যালার্ট সিস্টেম কার্যকর করা জরুরি। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—মানুষের সচেতনতা, নৈতিকতা এবং আইন মানার সংস্কৃতি তৈরি করা।
👉 যতক্ষণ না এই সংস্কৃতি গড়ে উঠবে, ততক্ষণ বাংলাদেশে প্রতিদিনের মৃত্যুমিছিল থামানো কঠিন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্পাদক হিমেল আহাম্মেদ কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত